আমাদের বিনোদন সাংবাদিকতা

শাকিব-অপু দম্পতির কোলে তাদের একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়

১.

আজকে আমাদের দেশে ‘ক্রিকেট ও ক্রিকেটার’ মানে বিশাল কিছু। আর একজন ক্রিকেটারের কাছে ‘ক্রীড়া সাংবাদিক’ অনেক সম্মানের। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট এ অবস্থানে আসার পিছনে ক্রীড়া সাংবাদিকদের বেশ বড় অবদান আছে। ক্রিকেটাররা খেলায় হারুক কিংবা জিতুক সাপোর্ট করে যেতে হবে— এ মানসিকতা কিন্তু লেখনি দ্বারা, সংবাদ পরিবেশনার দ্বারা সমর্থকদের মন ও মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তারা। যার ফলশ্রুতিতে দেশের সব বড় পত্রিকার খেলা নিয়ে পাতা দুটি থাকে। টিভি সংবাদে আলাদা সময় বরাদ্দ। ভারতের দিকে লক্ষ্য করি। ভারতে খেলার বাইরে বিনোদনের জন্য প্রতিদিন আলাদা করে দু-চার পাতা বের হয়। আলাদা ‘বিনোদন দৈনিক’ আছে। আমাদের পত্রিকাগুলো এক পাতার বেশি দিতে পারে না। সাপ্তাহিক ফিচার পাতা চার পাতা থাকলেও তা মাঝে মাঝে বন্ধ করতে হয় আলাদা কোন ক্রোড়পত্র প্রকাশ করলে। আর দুটি টিভি চ্যানেল ছাড়া কোন চ্যানেলে ডেইলি বিনোদন সংবাদের অনুষ্ঠান নেই। এতসব নেই আমাদের বিনোদন সাংবাদিকদের দুর্বলতার কারণে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে অক্ষম, তাই তারা পত্রিকায় বা চ্যানেলে ওইভাবে বিনোদনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

২.

আমাদের নতুন প্রজন্মের বিনোদন সাংবাদিকদের অল্প বিস্তর ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশই সংবাদ লিখতে শিখেছি, কিন্তু সাংবাদিকতা শিখি নাই। বিনোদন জগতের দুরাবস্থার জন্য পারোক্ষভাবে হলেও বিনোদন সাংবাদিকতা অনেকাংশে দায়ী। ব্যাখা দিচ্ছি। আমরা নিজেরাই আমাদের দেশের গান, সিনেমা, নাটক দেখি না, শুনি না। একজন শিল্পী সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তার কাছে চলে যাই। অন্য দেশের বিনোদন সংবাদগুলো পড়ি না নিয়মিত। বিনোদনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি না। সাহস করি না কখনো কোন প্রশ্ন করতে গিয়ে— সম্পর্ক নষ্ট হবার ভয়ে। কিন্তু এটা তো একজন পেশাদার সাংবাদিকের হবার কথা না। কোন নতুন শিল্পী আসলে বুঝে না বুঝে তাকে বিশাল কভারেজ দিয়ে বসি। আমি বলছি না তাকে কভারেজ দেওয়া যাবে না। কিন্তু তার আর একজন জনপ্রিয় ও অনেকদিন ধরে থাকা শিল্পীর কভারেজ একই লেভেলের হবে না নিশ্চয়? কোনটা নিউজ কোনটা নিউজ না— এটা না বুঝেই করি আমরা। সংবাদের সত্যতা যাচাই করি না বেশির ভাগ সময়। শুটিং স্পটে সবকিছুর সংবাদ যে একজন পরিচালক আগেই ফ্ল্যাশ করতে চাইবেন না, এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়— কিন্তু অনেক সময় তারা ভালমত বুঝিয়ে বললেও আমরা বুঝতে চাই না। আমাকে নিজ থেকে ফোন করে নিউজ না দিলে আমি নিউজ করবো না। কিন্তু সংবাদকর্মী হিসেবে নিউজ বের করাই যে আমার কাজ তা আমরা বুঝতে চাই না। সবসময় নিউজ আমার কাছে পায়ে হেঁটে আসবে না— আমি যে তার কাছে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও যেতে হবে এটা বুঝি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক আপনি যদি সোর্স ওভাবে তৈরি করে নিতে পারেন তাহলে হয়তবা অনেক কিছুই আপনি আগে পেয়ে যাবেন, কিন্তু সবসময় তা ভাবা বোকামি। আমরা ফোনে নিউজ কালেকশনে বিশ্বাসী। কিংবা টেলিভিশন হলে কী চরিত্র, কয়দিন শুটিং, কেমন লাগছে কাজ করতে এর বাইরে প্রশ্ন করতে জানি না। একটা পরিবেশনার যে নানান উপায় আছে তা আমরা জানি না। কারণ আমরা পড়ি না। পনের বছর ক্যারিয়ার পার করে আসা দেশীয় শিল্পীকে জিজ্ঞেস করি আপনার প্রথম ছবির নাম কী?

বিভিন্ন ইস্যু- সেন্সর, যৌথ প্রযোজনা এগুলো নিয়ে লিখি অথচ এগুলোর আইনগুলো জীবনে একবারও পড়ে দেখি নাই। শুটিং স্পটে গেছি দুপুরে তাই আমাদের লাঞ্চ করাতে হবে- আমি শুটিং সেটে অতিথি না। ‘অতিথি নারায়ণ তাদেরকে কিভাবে খালি মুখে ফেরায়’। অতিথির অসম্মান যে করে তার নিউজ কিভাবে ঠিকভাবে লিখি! আমি আপনার এত এত নিউজ করছি, তাই আমাকে আপনার ছবির প্রিমিয়ার শোর কার্ড দিতে হবে কিংবা অন্য সময়ে ফ্রি টিকেট দিতে হবে— না হলে এমন লেখা লিখবো না! ঢাকার বাইরে শুটিং হলে কোন দুঃখে যাবো কভার করতে? না অফিস টাকা দেয়, না আপনি খরচ দিবেন। অফিস টাকা দেয় না— মিনিমাম দুদিনে এক নিউজের পিছনে দুহাজার খরচ হবে। এ টাকা দিয়ে দশ নিউজ কালেক্ট করা যাবে। খালি খালি বাড়তি খরচ কেন করবো?

৩.

অনেক নাই থেকেই কিন্তু আজকে আমাদের দেশের খেলার পাতাগুলো এত বড় হয়ছে। ক্রিকেটাররা অবশ্যই নিজ যোগ্যতায় আজকের অবস্থানে এসেছে— এটা যেমন চরম সত্য, তেমনি ক্রীড়া সাংবাদিকদের কারণে প্রত্যক্ষভাবে না হোক পারোক্ষভাবে সাপোর্টারদের এত এত সাপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে। আমি বলছি না আমাদের সারাদিন পজেটিভ নিউজ করতে হবে বা নেগেটিভ করতে হবে। আমাদের বুঝতে কেন একজন ক্রীড়া সাংবাদিকের লেখা পড়লেই ওই খেলোয়াড় বা খেলা সম্পর্কে আরও জানতে ইচ্ছে করে। আমরা তাদের লেখা থেকে শিখতে পারবো কিভাবে প্রশংসা বা নিন্দা করতে হয়। আমি বলছি আমাদের তাদের কাছ থেকেই শিখতে হবে— কিন্তু এটা একটা মাধ্যম মাত্র!

৪.

ব্যক্তিগতভাবে আমার বিনোদন সাংবাদিকতার বয়স মাত্র তিন বছর। তাই হয়ত অনেকে আমার মুখে এসব কথা ভালোভাবে নিবেন না। এমন না যে এখানে যে কথাগুলো লিখলাম এগুলোর কোনটাই আমার মধ্যে নেই। কম-বেশি সবগুলোই আছে। কিন্তু এগুলো তো ঠিক হতে হবে। আর তা হলে আমাদের বিনোদন জগত ও বিনোদন সংবাদিকতা উভয়েরই মঙ্গল।

লেখাটি ২০১৫ সালে প্রকাশিত