এবার পরীমনিকে নিয়ে কবিতা লিখলেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

দুঃসময়ে যেকজন মানুষ পরীমনির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে একজন লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী একজন। পরীমনির মুক্তি জন্য সরব ছিলেন তিনি। শাহবাগ, প্রেস ক্লাবসহ যেখানে পরীমনির জন্য মানববন্ধন হয়েছে, সেখানেই লন্ডন থেকে তিনি মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিয়েছেন। পরীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পরীমনির মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেন গাফ্‌ফার চৌধুরী।

এবার পরীমনির জন্য লিখেছেন কবিতা । কবিতার শিরোনাম- ‘পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না’। পরীমনিকে নিয়ে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর কবিতাটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

তুমি আমার জন্য কেঁদেছ, শরতের আকাশের

চুপিসারি কান্না,

যা শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে।

আমি রোগশয্যায় শুয়ে শুনেছি সেই রোদন

তুমি কেন আমার জন্য কাঁদলে

আমি টেলিফোনে শুনেছি তোমার সেই কান্না

নায়াগ্রায় দাঁড়িয়ে যে জলপ্রপাতের

শব্দ শুনেছিলাম

তোমার কান্না সেই শব্দের সংগীতকে স্তব্ধ করেছে।

এখানে বড় ঠান্ডা, সেই ঠান্ডায় তোমার কান্না

উষ্ণ জলপ্রপাতের কাজ করেছে

আমার হৃদয়ে।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেন কাঁদলে

কেন হৃদয় দিয়ে হৃদয় বাঁধলে

ওরা তোমাকে বলে চরিত্রহীনা, আকাশনীলা পাখি

আমি জানি, তুমি শরতের শিশির ধোয়া

শিউলির মতো সুচরিতা।

ছবি দেখেছি, জেল থেকে বেরিয়ে আসছো—

দুই হাত ঊর্ধ্বমুখী জোয়ান অব আর্কের মতো

ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল

তুমি স্ফিংসের মতো জেগে উঠেছ

দুই ডানায় আগুনের ফুল।

পরীমনি, ওরা তোমাকে দ্রৌপদী বানাতে চেয়েছিল

তুমি হয়ে গেলে দয়মন্তী।

তোমার কান্না আমার মগ্নচৈতন্যকে স্পর্শ করেছে

তোমার চোখের কান্নায় দেখেছি আমার মায়ের—

চোখের জল।

তুমি তেরো নদী সাত সমুদ্র পেরিয়ে

আমাকে সিক্ত করলে মায়ের সেই চোখের জলে।

তোমার কান্না আমার বেদনাকে

ছুঁয়ে গেছে।

তুমি স্কাইলার্কের গান শুনেছ

বিলাতের বসন্তের বাগানে?

সুন্দরী পাখিটির কণ্ঠে কান্নাই গান

তুমি ওই স্কাইলার্কের মতো

আমাকে তোমার কান্না শোনালে

কান্না নয় গান, চোখের জল নয়

হৃদয়ের প্লাবন।

ভারত মহাসাগর পেরিয়েছে

তোমার কান্না, বঙ্গোপসাগরেও

বনানীর জলপাই রঙের বাড়িটা ছেড়ে

চাঁদপুরের পুরোনো বন্দরটা পেরিয়ে

মেঘনার জলকে টেমসের সঙ্গে মিশিয়ে

কার্তিকের চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে

আমার রোগশয্যার বারান্দায়।

পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না

মায়ের মতো ভালোবাসার

দুবাহু বাড়ায়ে দিয়ো না

ভালোবাসা বড় দুর্লভ সৌরভ

সুগন্ধির দোকানে কখনো পাবে না।

একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে শুক্রবার কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে।