‘দর্শকের ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে, চেষ্টা বিফলে যায়নি’

সিনেমার পর্দায় চোখের সামনে দৃশ্য বদলালেও আবেগের সত্যিকারের সেতু তৈরি হয় শব্দ আর সংগীতের মিশেলে।

দৃশ্যের গতি, চরিত্রের অনুভূতি, গল্পের টানাপোড়েন—সব কিছুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে সাউন্ডস্কেপ। একসময় এই দিকটিতে খানিকটা পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই চিত্র বদলেছে劇 আর এই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারিগর হয়ে উঠেছেন সংগীত পরিচালক আরাফাত মহসীন নিধি।

ঢাকাই সিনেমার নেপথ্য সংগীতে (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক) যিনি এনে দিয়েছেন এক নতুন জাগরণ।

এই ঈদে মুক্তি পাওয়া দুটি আলোচিত সিনেমা— ‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’-এর আবহ সংগীত ছিল নিধির সুরের জাদুতে মোড়া। প্রতিটি দৃশ্যের আবেগ, উত্তেজনা আর নাটকীয়তা বাড়াতে তার সংগীতায়োজন বড় ভূমিকা রেখেছে। দর্শক-সমালোচক দুই পক্ষই প্রশংসা করছেন তার কাজের গভীরতা আর আধুনিক সংগীতশৈলী।

শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরেই নয়, ‘তাণ্ডব’-এর প্রথম গান ‘খবর দে’-তেও নিধির কণ্ঠের ছোঁয়া। অন্যদিকে ‘ইনসাফ’-এ হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘তোমার খেয়ালে’-এর সুর ও সংগীতও তার সৃষ্টি।

টানা শাকিব খানের তিনটি বড় বাজেটের সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন নিধি। অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল রায়হান রাফীর ‘তুফান’। এরপর মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘বরবাদ’ এবং এবার ‘তাণ্ডব’। প্রতিটি কাজেই গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী সংগীত নির্মাণের চেষ্টা করেছি। দর্শকের ভালোবাসা পেয়ে মনে হচ্ছে, সেই চেষ্টা সফল হয়েছে।”

‘তুফান’-এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়াও ছবিটির জনপ্রিয় দুটি গান ‘ফেঁসে যাই’ ও ‘আসবে আমার দিন’-এর সুর-সংগীতও করেছেন তিনি। দুটি গানই পেয়েছে দর্শক-শ্রোতার দারুণ সাড়া।

এরও আগে রায়হান রাফীর আলোচিত সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’-এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও ছিল নিধির হাতে। সেই ছবির গান ‘লাগাম ঘোড়া’ ও ‘টাক কলিজার জান’ দর্শকপ্রিয়তার তালিকায় জায়গা করে নেয়।

২০০৯ সালে জিঙ্গেল নির্মাণের মাধ্যমে সংগীতজগতে পথচলা শুরু করেন আরাফাত মহসীন নিধি। দীর্ঘ দেড় দশকের ক্যারিয়ারে তৈরি করেছেন বহু স্মরণীয় গান। কাজ করেছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবেও।

বড়পর্দার আবহ সংগীতে তার অভিষেক ঘটে ২০১৬ সালে, রেদওয়ান রনীর ‘আইসক্রিম’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ‘দামাল’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘তুফান’, ‘বরবাদ’ ও ‘তাণ্ডব’-এর মতো একের পর এক সফল প্রজেক্টে তার নাম জড়িয়ে যায়।

নেপথ্যে থেকে ঢাকাই সিনেমার আবহ সুরের ভুবনে নতুন যুগের সূচনা করেছেন নিধি। তার হাত ধরে দেশীয় সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এখন শুধু দর্শকের কানে নয়, থেকে যাচ্ছে হৃদয়ের গহীনে।