২০২৩ সালে যেসব তারকা হারিয়েছে শোবিজ

দিন যায়, রাত আসে। ঘড়ির কাঁটা অবিরাম ঘুরতে থাকে। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে আরও একটি বছর। ২০২৩ সালে বিনোদন অঙ্গনে আমরা হারিয়েছি অনেক প্রতিভাবান ও গুণী শিল্পীদের। এই তালিকাটি ছোট নয়। সেখানে নায়ক ফারুক থেকে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ থেকে টেলিভিশন অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু অনেকেই রয়েছেন।

তারা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু বেঁচে আছেন আমাদের অন্তরে। বেঁচে থাকবেন তাদের আপন সৃষ্টিতে। ওটিটি, টেলিভিশন, নাটক, সিনেমা নৃত্য ও সংগীতে থেকে যাবে তাদের অসামান্য অবদান।

চিত্রনায়ক ফারুক:

ঢাকাই সিনেমার দাপুটে চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক মারা গেছেন ২০২৩ সালের ১৫ মে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

‘মিয়া ভাই’ খ্যাত নায়ক ফারুক এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমায় প্রথম অভিষিক্ত হন। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

নায়ক ফারুক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- সারেং বৌ, জীবন সংসার, এখনো অনেক রাত, কোটি টাকার কাবিন, মনে রেখ আমায়, পদ্মা মেঘনা যমুনা, লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমণি, পৃথিবী তোমার আমার, মিয়া ভাই, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আবার তোরা মানুষ হ, আলোর মিছিল, আলাল দুলাল, দিন যায় কথা থাকে, সখী তুমি কার, ক্ষমতাবান, কথা দিলাম, কিসমত প্রভৃতি।

নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান:

চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান মারা যান ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় এই পরিচালকের।

সোহানুর রহমানের উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে হলো: বিশ্বাস অবিশ্বাস (১৯৮৮), বেনাম বাদশা (১৯৯২), কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩), আখেরি রাস্তা (১৯৯৪), বিদ্রোহী কন্যা (১৯৯৬), আমার ঘর আমার বেহেশত (১৯৯৭), আমার দেশ আমার প্রেম (১৯৯৮), মা যখন বিচারক (১৯৯৮), অনন্ত ভালবাসা (১৯৯৯), স্বামী ছিনতাই (২০০৪), বলো না ভালোবাসি (২০০৫), পরাণ যায় জ্বলিয়া রে (২০১০), কোটি টাকার প্রেম (২০১১), লোভে পাপ পাপে মৃত্যু (২০১৪) প্রভৃতি।

পান্না কায়সার:
বিশিষ্ট লেখক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও শিশু সংগঠক পান্না কায়সার চলতি বছর আমাদের ছেড়ে চলে যান।

রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নির্মাতা সালাউদ্দিন জাকী:

খ্যাতিমান নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৭৭ বছর বয়সে মারা যান। ‘ঘুড্ডি’ সিনেমা পরিচালনা করে আলোচিত তিনি।

১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমা দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন তিনি।

নির্মাতা শফি বিক্রমপুরী:

চলচ্চিত্রকার শফি বিক্রমপুরী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘রাজদুলারি’।

এরপর ‘আলাদিন আলিবাবা সিন্দাবাদ’, ‘দেনমোহর’সহ কয়েকটি ছবি পরিচালনা করেছেন। তার প্রযোজিত ও পরিবেশিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’, ‘বন্দুক’, ‘সবুজ সাথী’।

নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ:

একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী জিনাত বরকতউল্লাহ ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। তিনি শুধু নৃত্য চর্চা-ই নয়, ১৯৮০ সালে বিটিভিতে প্রচারিত ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবেও ক্যারিয়ার শুরু করেন।

তিনি ৮০টির বেশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে মানুষের ভালোবাসা লাভ করেন।

অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু:

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী টেলিভিশন নাটকের অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর মারা যান। মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে ২০০৬ সালে অভিনয়ে আসেন তিনি। টেলিভিশনে ‘ছায়াবীথি’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।

একই বছর ‘প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর’ নামের একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। এছাড়া ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউসফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’সহ অনেক নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন।

গীতিকার রাজীব আশরাফ:

অর্ণবের গাওয়া শ্রোতানন্দিত ‘হোক কলরব’ গানের গীতিকার রাজীব আশরাফ ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

অর্ণবের ‘হোক কলরব’, ‘নাম ছিল না’, ‘ধূসর মেঘ’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও এসব গান লিখেছিলেন মূলত রাজীব আশরাফ। এছাড়াও তিনি মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেলের অধিকাংশ টেলিফিল্মে গান লিখেছেন। এর মধ্যে ‘জলকণা উড়ে যায়’, ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’, ‘এই আমার শহর’, ‘যাযাবর পাখনা’ উল্লেখযোগ্য।

বুলবুল মহলানবীশ:

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ মারা গেছেন ২০২৩ সালেই। দীর্ঘ অসুস্থতার পর শুক্রবার, ১৪ জুলাই ভোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৭ জুলাই রাষ্ট্রীয় সম্মান ও ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে।

নাট্যশিল্পী মিতা চৌধুরী:

বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী মিতা চৌধুরী মারা গেছেন ২০২৩ সালেই। ২৯ জুন যুক্তরাজ্যে তার মৃত্যু হয়। মিতা চৌধুরীর প্রথম ধারাবাহিকের নাম শান্ত কুটির। বিটিভিতে তার প্রথম নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর আরেকটি শহর চাই।

শুধু টিভি নাটকই নয়, মঞ্চে সূচনা ও গুড নাইট মার মতো প্রযোজনায় নিজেকে জড়ান। যুক্তরাষ্ট্রের নাট্যকার মারশা নরম্যানের ‘নাইট মাদার’ অবলম্বনে মিতা চৌধুরী গুড নাইট মার পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন।

নাট্য নির্মাতা মোহন খান:

জনপ্রিয় নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক মোহন খান চলতি বছর ৩০ মে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। প্রায় ৫ শতাধিক নাটক পরিচালনা করেছেন মোহন খান। রচনা করেছেন অন্তত ২ শতাধিক নাটক।

তার লেখা সাড়া জাগানো নাটক তিতির ও শঙ্খচিল প্রযোজনা করেছিলেন প্রয়াত আবদুল্লাহ আল মামুন।

নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল
ঢাকাই চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল চলতি বছর ৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। গুণী এই শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন।

পঁয়ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে তিনবার (দোলা, কি যাদু করিলা, একটি সিনেমার গল্প) জাতীয় পুরস্কার পান মাসুম বাবুল। বঙ্গবন্ধুর বায়োগ্রাফিতে একমাত্র বাংলাদেশি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

অভিনেতা এম খালেকুজ্জামান:

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা খালেকুজ্জামান ২০২৩ সালের ২১ মার্চ মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন খালেকুজ্জামান।

দেশ স্বাধীনের পর যুক্ত হন অভিনয়ে। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘সর্পভ্রমে রজ্জু’ বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

নির্মাতা, অভিনেতা ও কবি তারেক মাহমুদ:

নির্মাতা, অভিনেতা ও কবি তারেক মাহমুদ। তিনি একাধারে নাট্যনির্মাতা, অভিনেতা ও কবি ছিলেন। তার অকাল প্রয়াণে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এ বছর ২৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।