সুবীর নন্দী আর নেই

কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই।  মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে সুবীর নন্দীর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। ৩-৪ মিনিটের চেষ্টার পরে হৃদযন্ত্র সচল হলে নন্দিত এই সংগীতশিল্পীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৩০ এপ্রিল সুবীর নন্দীকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেদিন থেকেই শুরু হয় তার চিকিৎসা।

রোববারও (৫ মে) তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপর হার্টে চারটি স্টেন্টও পরানো হয়। এরপর সোমবার (৬ মে) সকালেও আরেক দফা তার হার্ট অ্যাটাক করে এবং মাল্টিপাল অরগান অকার্যকর হয়ে যায়।

সুবীর নন্দী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই।
১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন । প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। গানটির গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম।

৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন।

চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া সঙ্গীতে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

সুবীর নন্দীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৭ মে) আলাদা শোকবার্তায় তারা সুবীর নন্দীর মৃত্যুতে শোক জানান। এছাড়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপও শোক জানিয়েছেন।

সুবীর নন্দীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিল্পীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, সুবীর নন্দীর মৃত্যু বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেন, ‘চারবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই জনপ্রিয় শিল্পী তাঁর কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’

প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

সুবীর নন্দীর প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। শোক বার্তায় স্পিকার বলেন, সুবীর নন্দী ছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

সুবীর নন্দীকে ‘বাঙালির ভালোবাসার গানের পাখি’ অভিহিত করে শোক জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, আধুনিক বাংলা গানে সুবীর নন্দী যা দিয়েছেন, তা অসাধারণ। অসংখ্য হৃদয়স্পর্শী গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি কোটি মানুষের অন্তর জয় করেছিলেন। শুদ্ধ সঙ্গীতে অসীম কীর্তি রাখায় অমর হয়ে থাকবেন সুবীর নন্দী। তার তুলনা কেবল তিনিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.