ডুব নিয়ে বিতর্ক— আমরা দেখলাম, শুনলাম, জানলাম : তিশা

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’র অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। ছবিয়ালের অফিসে বসে ‘ডুব’-এর নানান বিষয়, তার চলচ্চিত্র ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।

ট্রেলারে যা দেখলাম ‘ডুব’-এর প্রধানতম চরিত্র জাভেদ আখতারের কন্যা হিসেবে তার সাথে আপনার একটা সময়ে মনস্ত্বাত্তিক একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সব মিলিয়ে বোঝায় যাচ্ছে আপনার চরিত্রটি বেশ অভিমানী।

আমার যে চরিত্র ‘সাবেরী’ মাউন্ট ফুজির মত— অনেক উত্থান-পতন, ভেতরে অনেক জ্বালা, বাইরে অনেক শক্ত একজন মানুষ। এ ছবির প্রায় প্রতিটি চরিত্রই এভাবে তৈরি।

চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনার আলাদা কোনো প্রস্তুতি ছিল?

গল্পটা এত শক্তিশালী, এর জন্য আমার আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন হয়নি। কারণ গল্পটি এতটাই হৃদয়গ্রাহী ও মার্জিত ছিল প্রতিটা চরিত্র মাথার মধ্যে সেট হয়ে গিয়েছিল— সরয়ার যখন স্ক্রিপ্টটা করে গল্প শোনায় তখন থেকে। তাছাড়া চরিত্রের মধ্যে ঢোকার জন্য পারিপার্শ্বিকতা, সহশিল্পী, আমার পরিচালকের সাহায্য ছিল। কারণ আমাকে তো ওই চরিত্রের মধ্যে থাকতে, ওটাকে লালন-পালন করতে হবে— যতদিন শুটিং থাকবে। যদি বলা হয় শারীরিক কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়েছে কিনা তাহলে বলব, আমাকে ৭-৮ কেজি ওজন কমাতে হয়েছিল দেড় মাসে— কোনো প্রকার ডায়েট, ব্যায়ামের সাহায্য ছাড়াই। তাছাড়া অন্যান্য ছবির মত এ ছবির আগেও দু-তিন মাস কোনো নাটকের শুটিং করিনি— চরিত্রের সাথে বসবাসের জন্য।

ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্কের কারণে গল্প আগে থেকে জেনে যাওয়া বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন পরিচালকের কাছ থেকে?

না, কাজের জায়গায় আমি আর সরয়ার খুব বেশি প্রফেশনাল। অন্য দশটা শিল্পীর মত আমার প্রতি ওর আচরণ একই ছিল।

এক্ষেত্রে সেটে কোন সমস্যা হয়নি?

পারিবারিক জীবনে আমাদের মধ্যে টুকটাক ঝগড়া হলেও সেটে সে আমার পরিচালক, আমি তার শিল্পী।

ইরফান খানের সাথে কাজের অভিজ্ঞতটা কেমন ছিল?

খুবই ভাল, খুবই ভাল। এত বড় একজন আন্তর্জাতিকখ্যাতি সম্পন্ন গুণী শিল্পীর সাথে কাজ করতে পারা অবশ্যই সম্মানের। অনেক মজা করে কাজটা করেছি, অনেক মিশুক একজন মানুষ। সবমিলিয়ে বলব, ‘ইটস লাইক অ্যা ওয়ান্ডারফুল জার্নি।’

‘ডুব’-এর শুটিংয়ের আগে আপনাদের কোনো রেফারেন্স দেওয়া হয়েছিল কিনা— এ মানুষটার মত তোমার চরিত্র?

না। প্রথমত রেফারেন্স দেওয়া প্রশ্নই আসে না। কারণ এটা কোনো বায়োপিক নয়। এখানে কিছু কিছু মানুষের গল্প বলা হয়েছে— যারা পরিস্থিতির শিকার। স্ক্রিপ্ট পড়ে আমার চরিত্রের সংলাপ, ধরণ যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই অভিনয় করেছি।

হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক— বাজারে থাকা এ বিতর্কে আপনার বক্তব্য কী?

ডুব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল— আমরা দেখলাম, শুনলাম, জানলাম, সেন্সরে গেল ছেড়েও দিল। কষ্ট করে কাজটা করলাম— দর্শকরা দেখবে, তারাই বিচার করবে সবকিছু।

ছবিটি নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু?

একটা সন্তান যখন আসে পৃথিবীতে, মা-বাবা নাম ঠিক করে, স্কুলে যেতে শুরু করে। কেউ বলে ডাক্তার হবে, কেউ বলে ইঞ্জিনিয়ার হবে, এ হবে ও হবে— বাচ্চাটাকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকে। ‘ডুব’, আমাদের বাচ্চাটা যেভাবে শুরু করেছে, পৃথিবীর অনেক জায়গায় ঘুরে এসেছে— সে হিসেবে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি।

আপনাদের প্রত্যাশিত দর্শক কারা?

আপনাদের না আমারটা বলতে পারি। আমার প্রত্যাশিত দর্শক সবাই। আমি তো কাজ করি— মা-বাবা, চাচা-চাচী, ভাই-বোন, বাচ্চা-কাচ্চা সবার জন্য।

তাহলে কি আপনি এটাও ভাবছেন এ গল্পের মধ্যে সবাইকে ছুঁয়ে যাবার মত কিছু আছে?

অবশ্যই আছে। যেহেতু এটা কিছু সম্পর্কের গল্প— সব মানুষকেই ছুঁয়ে যাবার কথা।

ফারুকী সবসময় তার ছবির চরিত্রগুলোর খারাপ দিকের চেয়ে ভাল দিকই বেশি দেখান। সহজ ভাষায় তাদেরকে নিয়ে খেলা করেন, মায়া সৃষ্টি করেন। তার সাথে এটি আপনার তৃতীয় ছবি— কখনও কি তার এ খেলার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে?

আমি হচ্ছি ‘ডিরেক্টরস আর্টিস্ট’, তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলি। যদি আমার কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমি তার সাথে আলোচনা করি। পরিচালকের যদি ‘আস্থা’ থাকে চরিত্রটির প্রতি শিল্পীরা এমনিতেই উতরে যায়।

কলকাতায় ‘হলুদ বনি’ ও দেশে ‘হালদা’র শুটিং করলেন। ছবিগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী?

‘হলুদ বনি’র কাজ সত্তর শতাংশের মত শেষ হয়েছে। বাকি ত্রিশ শতাংশ আটকা— পাওলি দামের বিয়ে সামনে তাই। আমাদের কারোই শিডিউল মিলাতে পারছি না। খুব শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে। আর ‘হালদা’র কাজও শেষ হয়েছে। যতটুকু আমি জানি তৌকীর ভাই ডিসেম্বরে মুক্তি দিতে যাচ্ছেন।

গতবছর অভিনয় করা মাসালা ঘরানা দুটি ছবির মধ্যে ‘অস্তিত্ব’-এ আপনার অভিনয় প্রশংসিত ছিল, কিন্তু ‘মেন্টাল’-এর জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। ছবিগুলোতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত কি আপনার ভুল ছিল?

ভুল বলব না, আমার জন্য সবকিছুই শিক্ষা। আমার জন্য ‘ডুব’-এর দর্শকরা যে রিভিউ দিবে সেটা আমার জন্য শিক্ষণীয়, ‘মেন্টাল’-এর রিভিউও শিক্ষণীয়। একটা মানুষের জীবনে উত্থান-পতন আছে, অনেক সিদ্ধান্ত ভুল নিবে— সব কিছু মিলিয়েই মানুষ। সিদ্ধান্ত সঠিক, সিদ্ধান্ত ভুল এ ব্যাপারগুলো অনেক বড় জিনিস। এগুলো তাত্ত্বিকরা বিবেচনা করবে। আমি আসলে এখনও শিখছি। আমি আমার জীবনটাকে, কাজটাকে পানির স্রোতের মত নিয়ে যাই— দেখা যাক কি হয়।

বাণিজ্যিক বা মাসালা ঘরানার ছবিতে কি সামনে আরও দেখা যাবে?

আমার কাছে ফিল্ম মানে ভাল ও খারাপ। বাণিজ্যিক কিংবা আর্ট এ টার্মগুলোতে আমি বিশ্বাস করি না। সরয়ারের পরের ছবি ‘শনিবার বিকেল’, ওটাতেও দেখতে পাবেন। ডিসেম্বরে শুটিং। আরো কিছু পরিচালকের সাথেও কথা হচ্ছে।

তাহলে তো ডিসেম্বরের আগে কোনো নাটকের শুটিংও করছেন না?

আমি তো ঈদ বা বড় কোনো উৎসব ছাড়া কাজ করি না— গত তিন বছর যাবৎ। এমনকি কোনো সিরিয়ালও করছি না। আর প্রতিটা ছবির আগে মানসিকভাবে সম্পৃক্ত হবার একটা ব্যাপার থাকে তাই মনে হয় না এটার আগে কোনো কাজ করব।

একটা ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন জিনিসটিকে প্রাধান্য দেন?

আমি সবার আগে স্ক্রিপ্টকে প্রাধান্য দিই— নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা ফিল্ম বলেন। আরেকটা কথা আমার ভাল না লাগলে আমি কোনো কাজই করি না। যার কারণে আমাকে আলাদা করে ভাল লাগা কাজের কথা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব না।

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আপনি মাত্র কিছুদিন আগে এতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু এতেও নিয়মিত নন। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে নিজেকে কেন দূরে রেখেছেন?

আমি খুব বেশি সাক্ষাৎকার, প্রচারণা, ফেসবুক— এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। কারণ আমি আমার পূর্ণ মনোযোগ আমার সংসার, পারিবার ও কাজের জায়গায় দিতে চাই। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার বড় দুর্বলতা হচ্ছে ‘কমিউনিকেশন’ খুব খারাপ। তবে এখন কিছুটা ভাল হয়েছে। আমার কাজ নিয়ে ফেসবুক পেজে পোস্ট করি, দর্শকদের সাথে কথা বলি মেসেজে।

ফেসবুকে বেশ ভাল ভাল স্ট্যাটাস দেন, লেখক হিসেবে দেখতে পাবো কি?

লেখালেখিটা ভাল লাগে তাই করি। কিন্তু লেখক হিসেবে পাবেন কিনা জানি না। আসলে মনে না টানলে আমি কিছুই করি না।

এ দেশের অনেক অভিনেত্রীকে পরিচালক হিসেবে দেখা গেছে, আপনাকেও কি পাব?

না না, পরিচালনা করবো না। বিয়ের আগে পরিচালক হবার খুব শখ ছিল, বিয়ের পর ওকে (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) দেখে শখ মিটে গেছে।

কেন?

আমাদের দেশের একজন পরিচালককে অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়ে কাজ করতে হয়। প্রোডাকশনের লোক কী করছে, আর্টিস্ট খেয়েছে কিনা— সব কিছুরই হিসেব নিতে হয়। প্রযোজককে ম্যানেজ করতে হয়, একই সাথে চ্যানেলকেও ম্যানেজ করতে হয়। এটা খুব কঠিন কাজ। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে একটা গল্প ভাবা, একটা গল্পকে বাস্তবায়ন করা— এটা খুব কঠিন। তার চেয়ে অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমি আমার চরিত্রকে নিয়ে ভেবেই পার পেয়ে যেতে পারি।

প্রযোজক?

হয়তবা, আমি আসলে জানি না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুব একটা করি না। আবার মন চাইলে এমনও হতে পারে এক-দুটা পরিচালনা করেও ফেলতে পারি। এতটুকু বলব আমি ভাল কিছু কাজ করতে চাই, ভাল স্ক্রিপ্টে।