বিদেশে আয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো গিয়াস উদ্দিন সেলিমের “পাপ পুণ্য” । সিনেমার বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান কমস্কোরের বরাত দিয়ে স্বপ্নস্কোয়ারক্রো’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০ মে থেকে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ২৫ হাজার ৩৮ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ লাখ টাকার বেশি (গ্রস) আয় করেছে ‘পাপ পুণ্য’। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি বা ১৩ হাজার ৫৫৬ ডলার আয় হয়েছে প্রথম তিনদিনে। আরও বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেমাটি কি বা মূল থিয়েটারে প্রদর্শিত হলে আয় ৪০-৪৫ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতো।
বিদেশে “পাপ পুণ্য” সিনেমার সফলতার নিয়ে সিনেমাটির বিদেশে পরিবেশক কোম্পানির চেয়ারম্যান সজীব সপ্তকের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলো,
“ছবিতে দেয়া শিরোনাম দেখে অনেক বিশাল কিছু অবশ্য ভেবে ফেলার কোন কারণ নেই। এটা সর্বকালের কোন হিসাব না। ২০২১ এর নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো বাংলাদেশি সিনেমা উত্তর আমেরিকায় মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে বেশ ভাল ব্যবধানে এগিয়ে সবচেয়ে বেশি আয় করা বাংলাদেশি সিনেমা এখন ‘পাপ পুণ্য’। তবে এটাকেই অনেক বিশাল কিছু মনে হতে পারে যখন জানবেন, ‘পাপ পুণ্য’ মোটামুটি শুণ্য লেভেল এর হাইপ তোলা, প্রচারবিমুখ (!) একটি বাংলাদেশি সিনেমা, আর এ কয়েকমাসে উত্তর আমেরিকায় বেশ ভালো হাইপ উঠা বাংলাদেশি সিনেমাও দেখানো হয়েছে।
.
বাংলাদেশের কোন একটি সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরী থাকা মানে ভারতের একটি সিনেমায় আমির খান থাকার মত ব্যাপার। দর্শকরা একটা ভাল সিনেমার নিশ্চয়তা পান। যে কারণে বক্স অফিসেও হয় হুলস্থুল সব রেকর্ড। সেই চঞ্চল চৌধুরী যদি প্রায় ৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেন, তা ও আবার গিয়াস উদ্দিন সেলিম এর মত নির্মাতার সিনেমায়, সাথে থাকে এ সময়ের ক্রেজ সিয়াম আহমেদ, দর্শকের তো পাগল হয়ে যাবার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ দর্শক কিছুই হন না, কারণ তারা জানেনই না। এখানেই আমির খান তার টিম এর কারণে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে যান। তাঁর ছবি ভাল ছবি দেখে তাঁর সিনেমার টিম ‘মানুষ তো দেখবেই’ ভেবে কোন কিছু না করে নিশ্চিন্তে বসে থাকেনা।
.
বাংলাদেশে হয়ত এভাবে এর পরেও কিছু হতে পারে। কারণ, সেখানে মূলত বাংলাদেশিরাই থাকেন। খুব ভাল ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ এর জোরে ২য়, ৩য় সপ্তাহ থেকেও কোন সিনেমার ভাল ব্যবসা শুরু হতে পারে। কিন্তু, বিদেশে আপনাকে এ সুযোগ দেবে কে? এখানে সিনেমার দর্শক তো শুধু বাংলাদেশিরা না। প্রতিটা প্লে উইকে, মাল্টিপ্লেক্স চেইনগুলির ঐ সপ্তাহের প্লে লিস্টে ঢুকার জন্য বিভিন্ন দেশের সিনেমা রীতিমত যুদ্ধে নামে। সে সাথে হলিউড, ইন্ডিয়ান সিনেমার বড় বড় টাইটেল এর দাপট তো থাকেই। এখানে কোন সিনেমা ভাল রিসেপশন পেলনা মানে আপনার আর কোন সুযোগ নেই। পৃথিবীবিখ্যাত এ সিনেমা চেইনগুলির তো অপশন এর অভাব নেই, তারা আপনার সিনেমা চালিয়ে একদিনও লস কেন করবে!?!? প্রতি সোমবার সিদ্ধান্ত হয়ে যায় পরের শুক্রবারের সব সিনেমার। শুক্র-শনি-রবি এ ৩ দিন মাল্টিপ্লেক্সগুলোর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সেল না হলে সে সিনেমা আর তারা পরের সপ্তাহে রাখেনা, এমনকি যদি সোমবার থেকে সব শো হাউজফুলও হয়। আর কোন সিনেমা যদি এখানে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ না চলে, সে সিনেমার বড় ব্যবসায়িক সাফল্য আসা কঠিন। তাহলে এখানকার সিনেমা ব্যবসায় কি ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ এর কোন গুরুত্ব নাই? অবশ্যই আছে। পরের সপ্তাহগুলোতে ছবি ভাল চলার জন্য স্ট্রং ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সব কিছু তখনই প্রাসঙ্গিক যখন সিনেমা একটা ভাল রিসেপশন পাবে এবং পরের সপ্তাহে যাবে। সে কারণে পুরো পৃথিবীর সিনেমা ব্যবসার একটা বড় অংশজুড়ে এখন ক্রিয়েটিভ মার্কেটিংকে এত গুরুত্ব দেয়া হয় যাতে সিনেমাগুলি একটা ভাল রিসেপশন পেতে পারে।
.
দারুণ কিছু এক্স ফ্যাক্টর, উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে চঞ্চল চৌধুরীর অসাধারণ ট্র্যাক রেকর্ড এর কারণে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো ‘পাপ পুণ্য’কে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সিনেমা হিসেবে প্রায় ১০০ টির মত নর্থ আমেরিকান মাল্টিপ্লেক্সে একযোগে মুক্তি দিয়েছে। কারণ, এত ওয়াইড রিলিজ এর জন্য সব ধরণের দর্শকের কাছে যে বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন, ১০০টি মাল্টিপ্লেক্স এর সবগুলোর আশেপাশেই তো সমান সংখ্যক বাংলাদেশি সিনেমার দর্শক থাকেনা। এখানে মূলত ১৫ থেকে ২০ টা থিয়েটার আছে, যেগুলোর আশেপাশে ৭০ ভাগ বাংলাদেশি দর্শক বসবাস করেন। এ থিয়েটারগুলি থেকেই মূল ব্যবসাটা হয়। বাকি থিয়েটারগুলিতে যা-ই দর্শক হয় তা যোগ হয়ে টোটাল নাম্বারটা তখন অনেক বড় দেখায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ‘পাপ পুণ্য’ কোন KEY থিয়েটারেই ১ সপ্তাহের বেশি চলেনি। মাত্র ৩টি থিয়েটারে সিনেমাটি ২য় সপ্তাহ চলেছে যেগুলো আমাদের মূল থিয়েটার না।
.
১ সপ্তাহে, ‘পাপ পুণ্য’ এর গ্রস বক্স অফিস কালেকশনঃ ২৫,০৩৮ ডলার
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, প্রথম ৩ দিনে সিনেমাটির কালেকশন কিন্তু ছিলঃ ১৩,৫৫৬ ডলার
ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে, সিনেমাটি প্রথম ৩ দিনে যা আয় করেছে, বাকি ৩/৪ দিনেও প্রায় সমান আয় করেছে। অথচ, প্রথম ৩ দিন ছিল ফ্রাইডে নাইট ও উইকেন্ড, বাকি দিনগুলি ছিল উইকডে। সাধারনতঃ উইকডেতে সেল অনেক নীচে নেমে যায়। ‘পাপ পুণ্য’ এর ক্ষেত্রে তা হয়নি বরং যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছিল, ২য় সপ্তাহে ৩/৪টা KEY থিয়েটার ধরে রাখতে পারলে সিনেমাটি অবলীলায় মোট ৪০/৪৫ হাজার ডলার আয় করে ফেলতে পারত। ‘দেবী’ যে বক্স অফিসে এত টাকা কালেকশন করতে পেরেছিল, এর কারণ, সবগুলো KEY মার্কেটেই সিনেমাটি ২ সপ্তাহ করে চলেছিল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২টি KEY থিয়েটারে সিনেমাটি চলেছিল ৩ ও ৪ সপ্তাহ করে।”