মাহি, মুগ্ধতায় ঘেরা একটি নাম

২০১২ সালের অক্টোবর মাস। তারিখটা ঠিক মনে পড়ছে না। বাসা থেকে কোচিংয়ে যাওয়া আসার সময় নিয়মিত একটা বাংলা সিনেমার পোস্টার চোখে পড়তো। পোস্টারটা ছিল এমন— নায়ক উল্টো হয়ে নায়িকাকে ফুল দিচ্ছে।Bhalobashar rong
প্রথম দিকে খুব একটা পাত্তা দেইনি। নিয়মিত চোখে পড়ায় হঠাৎ মনে হল সত্যিই এভাবে ফুল দেওয়া সম্ভব কি! আচ্ছা, ছবিতে এই দৃশ্যটি কি দেখাবে, কিভাবে দেখাবে?
কিউরিয়াস মাইন্ড থেকে পরিকল্পনা করেই ফেললাম ছবিটা দেখতে হলে যাবো। কিন্তু মনের ভিতর ধুকধুক করছে; কেননা আগে কোনদিন হলে যাইনি। কিভাবে যাবো, মানুষ কী ভাববে হলে যাচ্ছি দেখে ইত্যাদি নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। চট করে মাথায় বুদ্ধি এলো বোরখা পড়ে ছবিটা দেখতে যাবো। তাতে অন্তত কেউ চেনার সম্ভাবনা থাকবে না। আমার এই সমস্ত পরিকল্পনার সাথী ছিল আমার কাজিন মারুফা। ওকে নিয়েই তখন হলে যাই ছবিটা দেখতে। নাম ছিল ‘ভালোবাসার রঙ’। সেই প্রথম হলে যাওয়া।
Mahiya mahiছবিটি দেখার অনুভূতি খুব আনন্দের ছিল, যদিও পোস্টারের দৃশ্যটি খুঁজে পাইনি কোথাও। তবে খুঁজে পেয়েছিলাম নতুন এক সম্ভাবনাময়ী নায়িকাকে। যার অভিনয় দেখে হলে বসেই মারুফাকে বলেছিলাম— মারুফা, আরেকজন শাবনূর আমরা পেয়ে গেছি। বাংলাদেশিরা এখন থেকে বাংলাদেশি ছবি আবার দেখবে, দেখো তুমি।
আমার কমপ্লিমেন্টে মারুফাও খুব উচ্ছ্বসিত। বোঝা গেল তারও ছবিটা খুব ভাল লেগেছে।
এখনও যখন আমার মুহুর্তগুলি মনে পড়ে তখন আগের মত উচ্ছ্বাস অনুভব করি। খুব ভালো লেগেছিল ‘মাহিয়া মাহি’ কে। খুশিতে সারা বাসা এবং প্রতিবেশীদের বলে বেড়িয়েছিলাম— কী অভিনেত্রী! যেন নতুন যুগের শাবনূর।
তারপর থেকে আমার ছোট্ট স্পীকারে সারাক্ষণ শুধু ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির গানগুলি বাজাতাম। ভাললাগার শুরু।
‘অন্যরকম ভালোবাসা’র গানগুলি টিভিতে দেখে এত ভাল লেগেছিল, তখন থেকে ‘মাহিয়া মাহি’র পুরোদমে ভক্ত বনে যাই। ভক্তের সে পাগলামি আর ভালোবাসা আজও চলছে।
২০১২ থেকেই পরিকল্পনা তার সাথে দেখা করার। দেখা— সে এক ইতিহাস। তা কি আর চাইলেই হয়! অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে থাকা; তবে বিশ্বাস ছিল কোন না কোনদিন খুঁজে পাবোই।
২০১৩ সালে ঢাকায় আসা, পড়ালেখার সুবাধে। পাশাপাশি ইচ্ছেটা মনের গোপন কোটরে সযত্নে রাখা। তখন উত্তরায় হোস্টেলে ছিলাম। কোনভাবে জেনেছিলাম ‘মাহি’ উত্তরা থাকে। ঠিকানা খুঁজে বের করার প্রবল চেষ্টা চলছিল। ঠিকানা কি আর সহজে পাওয়া যায়?
ওই বছরের ২৭ অক্টোবর অনলাইন পোর্টালে পড়লাম— এইবারের জন্মদিনে অসুস্থ মাহিয়া মাহি, হাসপাতালে ভর্তি।
খবরটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল— সুস্থ মানুষটাকে দেখতে পারছি না, অসুস্থ খবরটা পড়তে হল! খুব চেষ্টা করলাম হাসপাতালের ঠিকানা যোগাড় করার। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হলাম। মন আরো খারাপ। সময় যেতে লাগলো।

Mahiya mahi
হাসপাতালে অসুস্থ মাহিকে ফুল নিয়ে অনেকেই দেখতে গিয়েছিলেন

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস। ততদিনে ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া’র সাথে মোটামুটি ভাব করে নিয়েছি মাহির খোঁজে। ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’-এর প্রিমিয়ার শো তে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত সেদিনও দেখা হলো না।
বাসায় এসে এতটাই হতাশ ছিলাম— বারবার বলছিলাম, আমার সাথে মনে হয় মাহির দেখা হবে না কখনো। আবারও চেষ্টার শুরু। জাজের একজন আমাকে বলেছিলেন, হোয়াটসঅ্যাপে মাহিকে পাবো। মাথায় উপর বাজ পড়লো। কারণ আব্বু যা যা লাগে সবই দেবে, কিন্তু এই মুহুর্তে ফোন কিনে টাকা নষ্ট করবো—এটা মানবে না। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ইউজ করা যায় এমন মোবাইল কিনতেই হবে, যেভাবেই হোক।
শুরু করে দিলাম স্টুডেন্ট পড়ানো। সেই টিউশনের টাকা দিয়ে ফোন কিনে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করে ‘মাহি’কে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা। মাহি তো অপরিচিত কাউকে রিপ্লাই দেয় না। আবারও হতাশ, এত কষ্টের পর!
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মাহির সাথে আমার দেখা হল। ঘোরে ছিলাম। বলতেই পারছিলাম না কী কী ঘটছে! এমন না যে কোনদিন কোন তারকাকে সামনাসামনি দেখিনি। কিন্তু এত পছন্দের তারকা আমার সামনে— এই প্রথম। তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য আমি কী না করেছি!
মাত্র সাতদিন পর আমার সাথে তার পরিচয়ের ৩ বছর পূর্ণ হবে। এরপর তার সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে। প্রতিবার সাক্ষাতে প্রথমবারের মত মুগ্ধ হই। প্রতিটা মুহুর্ত, সময় কিভাবে কেটেছে বর্ণনা করতে গেলে হয়ত পাতা ফুরিয়ে যাবে কিন্তু লিখা ফুরাবে না।
মুগ্ধতায় এভাবেই আজীবন ঘেরা থাকুক প্রিয় মানুষ, প্রিয় অভিনেত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.